নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৩ জুন, ২০২১
বাংলাদেশ টিকার জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে। বিভিন্ন দেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি লিখছে, কথা বলছে। আর এর মধ্যেই চীনের সঙ্গে গতকাল চুক্তি হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে বিএনপিপন্থী একটি মহল বিভিন্ন দেশে দেনদরবার করছে যেন বাংলাদেশ টিকা না পায়। টিকার সংকট সৃষ্টি হলে সরকারের ওপর জনগণের অনাস্থা হবে আর এই অনাস্থা থেকে শেষ পর্যন্ত জনগণের মধ্যে সরকারের জনপ্রিয়তা নষ্ট হবে, এরকম একটি চিন্তা থেকে বিদেশে অবস্থানরত কিছু কিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ যেনো টিকা না পায় সেজন্য আন্তর্জাতিক লবিং করছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ঠিক পদ্মা সেতুর মতো ঘটনা। বাংলাদেশ যেনো বিশ্বব্যাংক এবং জাইকা থেকে অর্থ না পায় সেজন্য যেমন আন্তর্জাতিক লবিং করা হয়েছিল, দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল, ঠিক একই রকমভাবে বাংলাদেশ যেন টিকা না পায় সেই জন্য লবিং করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে যে, বাংলাদেশে অবস্থানরত চীনা দূতাবাস এবং চীনের প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির সঙ্গে বিএনপিপন্থী কয়েকজন ব্যক্তি যোগাযোগ করেছেন এবং তাদেরকে বাংলাদেশকে টিকা প্রদান প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার জন্য অনুরোধ করেছেন। আর এই সমস্ত লবিং এর কারণেই বাংলাদেশে অবস্থানরত চীনা দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের চুক্তি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন। কূটনৈতিক মহল মনে করছেন, যদি বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের চুক্তি না হয় সেটি ফেসবুকে জানান দেওয়ার বিষয় নয়। কারণ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বিষয়। এরকম একটি প্রক্রিয়াধীন বিষয় সম্পর্কে এরকম মন্তব্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার বিরোধী। ধারণা করা হচ্ছে যে, বিএনপি`র একটি মহল এ ব্যাপারে তৎপরতা চালিয়েছে। শুধু বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসই নয়, বিএনপি`র পালিয়ে থাকা বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ যারা দুই দেশে অবস্থান করছেন তারা চীনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন যেন চীন বাংলাদেশকে টিকা না দেয়। এ নিয়ে একাধিক দেনদরবারের তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু চীনকে নয় ভারত যেন বাংলাদেশের টিকা সহসা না দেয় সেজন্য বিএনপি`র একটি মহল লবিং করছে। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি`র একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তারা অনুরোধ করেছেন যে বাংলাদেশকে যেন সহসা টিকা না দেয়া হয়।
ভারত যে টিকাটি সরবরাহ করতো সেটি হল অক্সফোর্ড আবিষ্কৃত অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলার টিকা যেটি সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে উৎপাদিত হতো। সেরাম ইনস্টিটিউটের এই টিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশই তৈরি করছে। এই সমস্ত দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশ যোগাযোগ করতে। ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে ২০ লাখ ডোজ টিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিতে পারে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের যে গোষ্ঠীগুলো আছে তারা এখন লবিস্ট ফার্ম নিযুক্ত করেছে যেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহসা বাংলাদেশকে টিকা না দেয়। যুক্তরাজ্যেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদন হচ্ছে। সেখানেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে। সেখানেও একটি মহল তদবির করছে যেন বাংলাদেশ সহসা টিকা না পায়। এরকম বিভিন্ন দেশে বিএনপি`র লবিষ্টরা তদবির করছে বাংলাদেশকে যেন টিকা দেওয়া না হয়।
এটি একটি চরম দেশবিরোধী তৎপরতা বলে মনে করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন যে, বিএনপি যদি সত্যি সত্যিই একটি দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হতো তাহলে তারা উল্টো বাংলাদেশ যেন টিকা পায় সেজন্য দেনদরবার চেষ্টা করত। কিন্তু তারা বিভিন্নভাবে যে তদবির করছেন তাতে তার মূল বিষয় হল যে, বাংলাদেশ যেন টিকা থেকে বঞ্চিত হয়। আর এটি একটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন